সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, এক শ্রেণির শিক্ষক রয়েছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন। তারা সান্ধ্যকালীন কোর্স ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে সপ্তাহব্যাপী ব্যস্ত সময় পার করেন। এ সমস্ত কাজের ব্যাপারে তারা খুবই আন্তরিক। যত অনীহা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে। তবে এ শিক্ষকগণ সিলেবাস শেষ করার ক্ষেত্রে খুবই সিরিয়াস। তাই তারা একসঙ্গে তিন থেকে চার ঘন্টা একসঙ্গে ক্লাস নিয়ে থাকেন।
এদিকে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১ম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ধুপখোলায় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করেন। সমাবর্তন বক্তা বক্তব্য প্রদান করেন এমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক । বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাগত বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান ও ধন্যবাদ বক্তব্য দেন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চালিকা শক্তি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনার জন্য রয়েছে একটি নিজস্ব আইন। তাই আপনারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। উপাচার্যগণ হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনাদের সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। আর আপনারা নিজেরাই যদি অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কী হবে? তাই এ ব্যাপারে নিজেকে সতর্ক থাকতে হবে অন্যদেরর সতর্ক করতে হবে।
এসময় তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষকতা অত্যন্ত মর্যাদাশীল পেশা। আপনারা যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তারা মেধাবী ও বিশেষ গুণে গুনান্বিত। তাই আপনারা চাইলে অন্য যে কোন লোভনীয় চাকরি বা পদ পদবী জোগাড় করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে শিক্ষকতা পেশা হিসাবে নিয়েছেন। তাই কোনো ধরনের লোভ লালসা ও মোহের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পেশার প্রতি মর্যাদাশীল থাকবেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরও বলেন, আমি জীবনে অনেক পরীক্ষায় ফেল করেছি, তবে কখনো পাস করার জন্য নকলের মতো অনৈতিক পথ অবলম্বন করিনি। এমনকি পাসের কাউকে জিজ্ঞাসাও করেননি। এটা আমার জীবনের অহংকার এবং এ নিয়ে আমি গর্ববোধ করি।
আক্ষেপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কিন্তু আজ শুনি শিক্ষকরা ছাত্রদের কাছে নকল সাপ্লাই করে। অনেক জায়গায় শোনা যায় অভিভাবকরা নকল সাপ্লাই করে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এদের কী শাস্তি হতে পারে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। পরীক্ষায় নকল প্রবণতা ও অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের কারণে দেশ ও জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে এর বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।
রাষ্ট্রপতি জনগণকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। ফুটওভার না উঠে যত্রতত্র রাস্তা ক্রস করা ঠিক না। যেখানে ব্যবস্থা নেই সেখানে অন্য কথা। সবাইকে নিজে সচেতন হতে হবে এবং অন্যদেরও সচেতন করতে হবে। বিদেশিরা এসে আমাদের চাল-চলন দেখে মনে করেন আমরা শৃংখল জাতি ।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের শুধু একাডেমিক শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। আমাদের জীবনব্যাপী শিক্ষা প্রচলন শিখতে হবে। যখন যে বিষয় আসবে সেই বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গীবাদ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। এবং অপরকে বিরত রাখতে হবে। সততা,মানবিকতা,পরমতসহিষ্ণুতা দেশপ্রেম এসব ধরে রাখতে হবে।
সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ইমেরিটাস ড. অরুণ কুমার বসাক বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে একই সঙ্গে সমস্যা ও সম্ভাবনার দেশ । সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণ নিহিত থাকে সৃষ্টির ধারাবাহিকতা রক্ষাকারী গর্ভধারিণী মা, জনগণ-নির্দেশক দেশমাতৃকা এবং মানুষের আবেগ ধারণকারী মাতৃভাষার মর্যাদার মাধ্যমে । বাংলাদেশের সম্বাবনাকে ফলপ্রস করতে আমি বিনীত নিবেদন রাখছি। বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফলাফল বু ই পরিচায়ক , শিক্ষার্থীর মেধা এবং সৃজনশীলতার নির্দেশক নয় । দেশের সমস্ত কর্মকাণ্ডে শিক্ষিত মানবশক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সরবরাহ অতএব দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক অপরিহার্য। প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের প্রথম প্রবেশদ্বার ।
রাষ্ট্রপতি প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে উপচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ১৫ বছর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন অগ্রগতি মূল্যায়নের যথেষ্ট সময় নয়। তারপরও আমাদেও শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে ভাল অবস্থানে ঠাই পাচ্ছে। দেশের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ফলাফলে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান অনেক এগিয়ে দূর এগিয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১৮ হাজার ৩১৭ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে স্নাতকোত্তর ৪ হাজার ৮২৯ জন, স্নাতক ১১ হাজার ৮৭৭ জন, পিএইচডি ৬ জন, এমফিল ১১ জন ও ইভেনিং প্রোগ্রামের ১৫৭৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এসব গ্র্যাজুয়েটদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন আয়োজন করেছেন। বিকালে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান সমাপ্তি হয়।